রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

সফলদের স্বপ্নগাথা- প্রত্যাখ্যানের পর প্রত্যাখ্যান হয়েছি

জ্যাক মা অনলাইনভিত্তিক পৃথিবীর অন্যতম বড় কোম্পানি আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তাঁর আসল নাম মা ইয়ুন, জন্ম চীনের জিজিয়াং প্রদেশে ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেবে জ্যাক মা পৃথিবীর ৩৩ তম শীর্ষ ধনী, তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তিনি এই বক্তব্য দেন।
জ্যাক মাপ্রতিদিন আমাদের সাইটে কয়েক কোটি ক্রেতা প্রবেশ করেন। আমরা চীনে প্রায় ১৪ মিলিয়ন নতুন চাকরি তৈরি করেছি। আমাদের শুরুটা ছিল মাত্র ১৮ জন মানুষ দিয়ে। এখন আমরা ৩০ হাজার মানুষ কাজ করি। ছোট একটি রুম থেকে শুরু করে আমাদের এখন কয়েক গুণ বড় অফিস হয়েছে। ১৫ বছর আগে আমরা কিছুই ছিলাম না। ১৫ বছর আগের কথা ভাবলে আমরা এখন বেশ বড় কোম্পানি, কিন্তু আগামী ১৫ বছর পরের কথা চিন্তা করলে আমরা এখনো শিশু, ছোট বাচ্চা। আমার বিশ্বাস, ১৫ বছর পর মানুষ ই-কমার্সের কথা ভুলে যাবে। তাদের কাছে ই-কমার্সের অস্তিত্ব বিদ্যুতের মতো স্বাভাবিক মনে হবে।
আমাদের কোম্পানি আলিবাবার আইপিওর মূল্যের পরিমাণ বেশ ছোটই, মাত্র ২৫ বিলিয়ন। আমরা সারা পৃথিবীর অন্যতম বড় মার্কেট ক্যাপিটাল কোম্পানি এখন। আমার দল আর আমাকে আমি মাঝেমধ্যেই বলি, এটা কি সত্য কিছু? আমরা ততটা বড় নই, যতটা দেখায়। বছর খানেক আগেও মানুষ বলত, আলিবাবার ব্যবসার মডেল ভয়ংকর। আমাদের চেয়ে অ্যামাজন ভালো, গুগল অসাধারণ বলে সবাই ভাবত। আসলে তখন আলিবাবার মতো ব্যবসার মডেল যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না বলেই আমাদের নিয়ে সবাই এমনটা বলত। আমি নিজেকে ও অন্যদের বলতাম, লোকজন যা ভাবে, আমরা তার চেয়ে ভালো। কিন্তু এখন সবাই বদলে গেছে, আমাদের অনেক বড় বলে ভাবে সবাই। আমি সবাইকে বলতে চাই, আমরা বড় কেউ নই। আমরা ১৫ বছরে পা রাখা একটি কোম্পানি মাত্র। এই কোম্পানির জন্য ২৭ বা ২৮ বছরের কিছু তরুণ এমন কিছু কাজ করছেন, যা কিনা মানুষ এর আগে কখনো চেষ্টা করেনি।
১৯৬৪ সালে আমার জন্ম। চীনে তখন সবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা দিতে হয়, আমি সেখানে তিনবার ফেল করেছিলাম। আমি আরও অনেকবারই ফেল করেছি। প্রাইমারি স্কুলে পরীক্ষার সময় দুবার ফেল করেছিলাম। মাধ্যমিক স্কুলেও তিনবার ফেল করেছি। আমার শহর হাংজুতে মাত্র একটি মাধ্যমিক স্কুল ছিল। বেশ খারাপ ছাত্র ছিলাম দেখে আমাদের প্রাথমিক স্কুল থেকে পড়া কাউকে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করতে চাইত না কেউ। বারবার ভর্তিতে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বেশ উপকারই হয়েছিল আমার!
এখনো আমাকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে আমি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। সেখানেও আমাকে ৩০ বারের মতো প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। যখন চীনে কেএফসি আসে, তখন ২৪ জন লোক চাকরির জন্য আবেদন করেন। সেখানে ২৩ জন মানুষ চাকরির সুযোগ পান। শুধু একজনই বাদ পড়েন, সেই মানুষটি আমি। এমনও দেখা গেছে, পাঁচজন মানুষের মধ্যে চারজনের চাকরি হয়েছে, আর বাকি একজন আমি নেই। প্রত্যাখ্যানের পর প্রত্যাখ্যানই দেখেছি আমি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যও আবেদন করেছিলাম, সেখানে আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। ১০ বার লিখেছিলাম, ‘আমি ভর্তি হতে চাই।’ ১০ বার আবেদন করেছি, আর প্রতিবারেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছি।
আমি ১২–১৩ বয়স থেকে ইংরেজি শেখা শুরু করি। চীনে তখন ইংরেজি শেখার সুযোগ ছিল না। কোনো ইংরেজি বইও পাওয়া যেত না। আমি যে হোটেলে বিদেশি পর্যটক আসত, সেখানে গিয়ে বিনে পয়সায় পর্যটকদের গাইডের কাজ করতাম। এরপর নয় বছর এই কাজ করে গেছি। তাতেই আমি পশ্চিমা ঢঙে ইংরেজি বলা শিখেছি। বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে ঘোরাফেরা আমার মনকে অনেক বড় করে দিয়েছে। স্কুল আর মা-বাবার কাছ থেকে যা শিখতাম, আর পর্যটকদের কাছ থেকে যা জানতাম, তা ছিল ভিন্ন। সে জন্যই আমি নিজের জন্য ভিন্ন এক অভ্যাস গড়ে তুলি নিজের মধ্যে। আমি যা দেখি, যা পড়ি, তা মন দিয়ে পড়ি-চিন্তা করি।
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে সিয়াটলে আমি প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাই। ইন্টারনেটের গতি ছিল তখন ভীষণ ধীর। আমার বন্ধু আমাকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়। ভয়ে কম্পিউটার স্পর্শ করিনি সেদিন। চীনে কম্পিউটারের দাম ছিল অনেক, নষ্ট হয়ে গেলে তখন দাম দিতে পারতাম না। বন্ধুর উৎসাহে ইন্টারনেটে সার্চ করি। সেবারই প্রথম ই-মেইল শব্দটি শুনি।
আমি ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু করার চেষ্টা শুরু করি। সেই সময়টায় বেশ জনপ্রিয় একটি নাম ছিল ইয়াহু। আমাদের কোম্পানির নাম আলিবাবা দিতে চেয়েছিলাম। ১০ থেকে ২০ জনের বেশি মানুষকে জিজ্ঞেস করি, আলিবাবাকে তারা চিনে নাকি? সবাই বলেছিল ‘হ্যাঁ’। ‘আলিবাবা ও ৪০ চোর’ গল্পের কারণে সবাই আলিবাবাকে চিনে। তাই আমি এই নামই গ্রহণ করি।
শুরু থেকেই আমরা অনলাইনে বিশ্বাসের একটি জায়গা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানুষ একে অন্যকে কম বিশ্বাস করে। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন বার লেনদেন করি। অনলাইনে মানুষ একজন আরেকজনকে চেনে না। আমি আপনাকে চিনি না, কিন্তু আমি আপনাকে পণ্য পাঠাই। আপনি আমাকে চিনেন না, কিন্তু আপনি আমাকে টাকা ঠিকই পাঠান। বিশ্বাসের জায়গাটা বড় করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আলিবাবার সাফল্যের অন্যতম লুকানো সূত্র হচ্ছে আমাদের এখানে অনেক নারী কাজ করেন। শুধু আলিবাবায় ৪৭ শতাংশ কর্মী হচ্ছেন নারী। আমাদের সব অফিস মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ কর্মী নারী। আমাদের ম্যানেজমেন্টে ৩৩ শতাংশ হচ্ছেন নারী, আরও উচ্চপর্যায়ে আছেন ২৪ শতাংশ। একুশ শতকে আপনাকে জিততে হলে অন্যকে স্বাবলম্বী করতে হবে। নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়ে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। আপনি অন্যের অবস্থা উন্নতি করতে পারলেই আপনি সফল। চীনের ৮০ শতাংশ তরুণ সফল হয়েছেন শুধু কাজের গুণে। তাঁদের বড়লোক বাবা নেই বা ব্যাংকের লোন নেই; শুধু কাজ করেই তাঁরা সফল। জীবনে সফল হতে গেলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হয়।
শুরুর দিকে আমাকে সবাই পাগল বলত। টাইম ম্যাগাজিনে আমাকে পাগল জ্যাক বলা হয়েছিল। আমার মনে হয় পাগল হওয়া ভালো। আমরা পাগল, কিন্তু আমরা নির্বোধ নই। কোনো একদিন আমি স্কুলের শিশুদের আমার কথা বলতে যাব। আমি তাদের বলতে চাই, নিজের মনকে বড় করো, নিজের সংস্কৃতিকে বড় করো। নিজের মূল্যবোধকে শক্ত করো, নিজের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাও। তুমি যদি কিছু করতে চাও, তাহলে প্রত্যাশা করা শিখতে হবে।
সূত্র: ইন্টারনেট। ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ সুইজারল্যান্ডে দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘অ্যান ইনসাইট, অ্যান আইডিয়া উইথ জ্যাক মা’ নামের বিশেষ সেশনে দেওয়া বক্তব্যের নির্বাচিত অংশের অনুবাদ করেছেন জাহিদ হোসাইন খান
http://www.prothom-alo.com/we-are/article/610159/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF

ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলে, হতাশ হবার কিচ্ছু নাই

যে ছেলেটা পলিটেকনিকের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পায় নাই, সে তো জিন্দেগীতে বুয়েট, মেডিকেল, এমনকি ঢাকা ভার্সিটিতেও চান্স পাবে না। মোটামুটি গ্যারান্টি। আর ভালো জায়গায় চান্স না পাইলে, প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানোর মত বাপের টাকা না থাকলে, লাস্ট অপশন হিসেবে, অন্যদের ক্ষেত্রে যা হয়, এই ছেলেটার ক্ষেত্রেও তাই হলো। তাকে একটা নরমাল কলেজে ভর্তি করায় দেয়া হলো। নরমাল কলেজ থেকে পাশ করার অনেক সমস্যা আছে। তারমধ্যে প্রথম সমস্যা হচ্ছে, কেউ চাকরি দিতে চায় না। সেই ছেলেটারও একই কন্ডিশন হলো। বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে, টিচার হতে পারবে এমন একটা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হলো। সেই ডিপ্লোমা কোর্স শেষ হবার পরে, অন্য সবার চাকরি হয়ে গেলেও, অভাগা ছেলেটার কপালে কিচ্ছু জোটে না। কত রকমের চাকরির ইন্টারভিউ দেয়, কোন লাভ হয় না। এমনকি ইন্সুরেন্স কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবেও কেউ তাকে নিতে চায় না।
.
কিছুদিন বেকার থাকার পরে, সামারে খন্ডকালীন টিচার হিসেবে দুই মাসের একটা চাকরি পায়। দেখতে দেখতে দুই মাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, যেই লাউ সেই কদু। আবারও বেকার। এরপর আর কি করবে? অন্য সবাই যা করে, সেও তাই শুরু করলো- টিউশনি। এইভাবে এক দুই দিন না, পুরা দুই বছর পরে, তৃতীয় শ্রেনীর সরকারী কেরানী হিসেবে একটা চাকরি পেয়ে যায় সে। চাকরি পেয়ে যাবার পরে অন্যরা যা করে, সেও তাই করলো। বিয়ে, ঘর সংসার করে, কিছুদিনের মধ্যেই দুই সন্তানের বাপ হয়ে গেলো।
.
সরকারী কেরানীর সেই চাকরীটা সে সাত বছর করেছিলো। তারপরে, থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের এক্সট্রাঅর্ডিনারী প্রফেসর হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখে চাকরীর অফার পায়। কেরানী থেকে এক্সট্রাঅর্ডিনারী প্রফেসর হয়ে যাবার কারণটা খুবই বিশ্বাসযোগ্য। কারণ, ছেলেটার নাম আলবার্ট আইনস্টাইন।
.
সো, দুইদিন পরে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলে, হতাশ হবার কিচ্ছু নাই। কারণ, নামকরা ভার্সিটিতে না টিকলে, আইনস্টাইন হয়ে যাবার চান্স বেড়ে যাবে।

https://www.youtube.com/watch?v=NyK5SG9rwWI

আইনস্টাইন যে টিউশনি করছে- এইটা এইখানে লেখা আছে 
https://www.library.ethz.ch/.../Officer-in-the-patent...

https://www.facebook.com/JhankarMahbub/posts/10152929870261891

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

পিচাই যেন বলিউডি ছবির নায়ক

সুন্দর পিচাই গত বছর যখন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড, সার্চ, ম্যাপস—এসব পণ্যের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেন, ব্লুমবার্গ থেকে তাঁকে ‘মোবাইলের জগতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ল্যারি পেজ তাঁর হাতে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সে কথাই সত্যি হয়েছে।
পিচাইয়ের গল্প যেন বলিউডের কোনো ঘটনা। রুপার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি বটে, কিন্তু বুদ্ধিমত্তা আর কাজের গুণে আজ বিশ্বের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত আসনে পৌঁছেছেন।
খুব সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম সুন্দর পিচাইয়ের। জন্মের আগে তাঁর মা স্ট্যানোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা রঘুনাথ পিচাই ছিলেন একটি কারখানার বিদ্যুৎমিস্ত্রি।
সুন্দরের ছেলেবেলার কথা স্মরণ করে রঘুনাথ বলেন, ‘অফিস থেকে এসে আমি ওর সঙ্গে গল্প করতাম। অফিসের নানা ঘটনার কথা বলতাম ওকে। ও যখন একটু বড় হলো, আমার কাজ সম্পর্কে তার আগ্রহ বাড়তে থাকল। আমার মনে হয়, এখান থেকে ওর প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছে।’
সুন্দর পিচাইদের ছিল চারজনের পরিবার। দুই কামরার ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। একটিতে ছোট ভাইকে নিয়ে সুন্দর ঘুমাতেন। ছোটবেলায় তাঁদের বাড়িতে কোনো টিভি ছিল না। ছিল না গাড়ি। যাতায়াতের জন্য তাঁকে সব সময় বেছে নিতে হয়েছে বাস বা বাবার স্কুটার। কোথাও যেতে হলে এক স্কুটারে চারজনকে যেতে হতো। এ যেন বলিউডের কোনো চিত্রনাট্য, যেখানে ছোট্ট এক ফ্ল্যাট থেকে সিলিকন ভ্যালিতে উড়ে আসা।

সুন্দরের বয়স যখন ১২ বছর, তখন তাঁর পরিবারে প্রথম টেলিফোন সেট আসে। এই টেলিফোন প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। যে নম্বরে সুন্দর ডায়াল করতেন, তাই মনে রাখতে পারতেন। পিচাই বলেন, ‘চাচা কারও ফোন নম্বর ভুলে গেলে আমাকে কল দিতেন এবং তাঁর ফোন নম্বরটি জিজ্ঞাসা করতেন। তবে সেটি সত্যিই কাজের কি না, আমি নিশ্চিত ছিলাম না।’
সুন্দর পিচাইয়ের সংখ্যা মনে রাখার একটি দারুণ গুণ আছে। গুগলের প্রকৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালন উইস্ট্যাস বলেন, ‘সম্প্রতি এক সভায় ভয়েস সার্চবিষয়ক কিছু পরিসংখ্যান গড়গড় করে বলে গেলেন সুন্দর পিচাই। এ বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করি। অথচ আমি যে সংখ্যাটি জানি না সেটিও দেখি সে জানে!’
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন সুন্দর। আইআইটি খড়গপুরে স্নাতকে ভালো ফলাফল করেন। স্ট্যানফোর্ডে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড সেমি কন্ডাক্টর ফিজিকস নিয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পান। স্কুলে বরাবর ভালো ফল করা সুন্দর ছিলেন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন। ফুটবলের দারুণ ভক্ত। এরপর আইআইটি খড়্গপুর। যেখানে প্রায়ই তাঁকে দেখা গেছে ক্ষয়ে আসা হাওয়াই চপ্পল পায়ে। এ নিয়ে ভাবেননি। পড়াশোনা করেছেন মন দিয়ে। তাঁর স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিটি নম্বরের জন্য যুদ্ধ করেছে সুন্দর। বিশেষ করে গণিত ও পদার্থবিদ্যায়। কখনো ভুল করলে তা শুধরে বারবার করার চেষ্টা করেছে।’
বিদেশে পড়তে গেলে যে খরচ, তা নিয়েই সমস্যায় পড়তে হয় সুন্দরের বাবাকে। বিমানের টিকিট, থাকা-খাওয়ার খরচ—সব মিলিয়ে অনেক টাকার দরকার। কিন্তু ঋণ জোগাড় করতে পারেননি বাবা। তবু হাল ছাড়েননি। নিজের অ্যাকাউন্ট প্রায় খালি করে তুলে দিয়েছেন জমানো টাকা। যা তখন তাঁর এক বছরের বেতনের থেকেও বেশি। পিচাই বলেন, ‘এ অবস্থায় আর দশজন মা-বাবা যেটা করেন আমার মা-বাবাও তাই করলেন। আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তাঁদের জীবনের অনেক স্বপ্নই আমার জন্য বিসর্জন দিলেন।’
১৯৯৩ সালে স্ট্যানফোর্ডে পৌঁছানোর পর একটা ব্যাকপ্যাক কেনার দরকার পড়ল সুন্দরের। যখন জানতে পারলেন এর দাম ৬০ মার্কিন ডলার তখন তিনি একেবারেই দমে গেলেন। পরে পুরোনো একটি ব্যাকপ্যাক জোগাড় করে কাজ চালিয়েছেন তিনি। স্ট্যানফোর্ডে যাওয়ার পর প্রথম বছর একজনের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন।
সুন্দরের জীবনে অবশ্য প্রেমও এসেছে। বান্ধবী অঞ্জলির সঙ্গে প্রেম হয়েছিল তাঁর। স্ট্যানফোর্ডে থাকার দিনগুলো কেটেছে বিরহে। তবে পরে বিয়ে করেছেন অঞ্জলিকে।
সুন্দর পিচাই ভারতীয় চলচ্চিত্রের দারুণ ভক্ত। গত বছর গুগলের ক্যাম্পাসে ডেকেছিলেন বলিউডের অভিনেতা শাহরুখ খানকে। শাহরুখ খান ওই সময় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির শো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। শাহরুখ খানকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি যদি অভিনেতা না হতেন তবে কী করতেন? শাহরুখ বলেন, খেলোয়াড় হতাম। অবশ্য শাহরুখ ওই অনুষ্ঠানে জানান, সুন্দরের মতো প্রকৌশলী হওয়ার শখ তাঁরও ছিল। তাই আইআইটিতে পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। ইলেকট্রনিকস বিষয়ে ১০০তে ৯৮ নম্বরও তুলেছিলেন তিনি।
স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি সম্পন্ন করে অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করেছিলেন সুন্দর পিচাই। তবে পরে সে চিন্তা থেকে সরে গিয়ে সিলিকন ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা অ্যাপ্লাইড ম্যাটেরিয়ালসে চাকরি নেন। এরপর ২০০২ সালে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। ওই দিন গুগল বিনা মূল্যের মেইল সেবা জিমেইল চালু করে। পিচাই বলেন, তিনি গুগলের এই জিমেইলকে ভেবেছিলেন ‘এপ্রিল ফুল’ বানাতে, গুগল যে ধরনের মজা করে জিমেইল সেরকমই একটা কিছু হবে।
গুগলে চাকরি হয়ে যায় সুন্দরের। এরপর ধীরে ধীরে পরিচিত হন গুগলের করপোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে। নতুন নতুন ধারণা দিয়ে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। মারিসা মেয়ার, অ্যান্ডি রুবিন, কামাঙ্গার, হুগো বাররা, ভিক গানডোটরার মতো সহকর্মীদের পেছনে ফেলে তরতর করে উঠতে থাকেন ওপরের পদে। ২০১৫ সালের আগস্টে এসে গুগলের সিইও তিনি।

http://www.prothom-alo.com/technology/article/602539/%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%A1%E0%A6%BF-%E0%A6%9B%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%95