সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৪)

সেই ছোটবেলা থেকে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার সময় বাসের জানালা দিয়ে এয়ারপোর্ট দেখতাম,মনের ভিতর অজানা এক কৌতুহল কাজ করত এয়ারপোর্ট এর ভিতরটা দেখার জন্য। কিন্তু নিকট কোন আত্মিয় এয়ারপোর্ট দিয়ে আসা যাওয়া না করার ভেতরটা আর দেখা হয়ে ওঠে নি।  ব্র্যাক এ যব করার সময় প্রায় দেরবছর সপ্তাহে না হলেও মিনিমাম ৫-৬ বার এয়ারপোর্ট এ যেতে হত,কারন প্রোটোকর এর কাজটা আমার কাজের একটা অংশ ছিল।  রাত ১১:৪০ এ সিংগাপুর এয়াররাইন্স, ১২:১০ এ ড্রাগন এয়ার, ভোর ৩টায় ব্রিটিশ এয়ার, সকাল ৮টায় কাতার এয়ার, ৮:৪০ এ এমিরেটস। এমনকোন ফ্লাইট টাইম নাই যে আমার যাওয়া হয় নি। প্রথম প্রথম খুব ভাল লাগলেও পরে আর ভাল লাগত না। কোটেট সুটেট টাই ওয়ালা থেকে শুরু করে, লাগেজে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বিছানার চাদর সদৃশ কাপড়ে মুড়ানো বিশাল ব্যাগ ওয়ালা কিংবা হালকা পাতলা গড়নের লাগেজ ওয়ালা সুন্দরী বিমানবালা সবার ই বিহরগমন হত গ্রীন চ্যানেল দিয়ে । আমাদের স্পেশাল পারিমশন থাকায় গ্রীন চ্যানেলের মানে ইমিগ্র্যাশন এর সামনে পর্যন্ত যেতে পারতাম। অবশ্য এখন টিকেট কেটে সেখানে যাওয়া যায়। কিন্তু টিকটের দামটা বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় সাধারন লোকজনের বিচরন সেখানে কমই হয়।   হোটেল,করপোরেট লোকজনেকই বেশি দেখা যেত। আর এক বিশেষ শ্রেনির লোকদের দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম।তাদের কার্জকলাপ এর একটু বর্ননা নাদিলেই নয়।দু তিনটা ফ্লাই এর যাএীরা যখন একসাথে বেরোয় বিশেষ কের মধ্যপ্রাচ্য,সৌদি আরব এর ফ্লাইট এর যাএীরা যখন বিশাল বিশাল লাগেজ ও মালামাল নিয়ে বেরোয়,কেউ হয়ত ৫ বছর কেউ ১০ বছর কেউবা তার ও বেশি সময় পর ফিরছে ।আর কিছুখন পরই তাদের প্রিয় স্বজনদের সাথে দেখা হবে, তারা হয়ত সেই সকাল থেকে অপেখা করছে।প্রিয় স্বজনদের সাথে মিলিত হবার কথা তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে। তো গ্রীনচ্যানেলের পেরোনোর এলাকাটা সচ্ছ কােচ ঘেরা হওয়ার ভিতরের সব কিছুই বাইরে থেকে স্পস্ট দেখা যায়। কারা বেরোচ্ছে। তো এই বিশেষ গ্রুপের লোকগুলু ও গ্রীন চ্যানেলের গেটে দাড়িয়ে থেকে আর যখন এক দল লোক বেরোতে দেখে তখনই একজন আর কেজনকে বলে এ লাল শার্ট আমার, এ পিছনের সবুজ বেগ আমার। আর মানুষ গুলো যখন কাছে চলে তখনই শুরু হয় তাদের আলাপচালিতা, কোথায় যাবে,  আত্মিয় স্বজন কেউ নিতে আসছে কিনা। তাদের সাথে কথা হয়েছে কিনা। অনেকে আর তাদের মোবাইল এগিয়ে দিচ্ছে কথা বলার জন্য। আর এই সব কথা বলার মাঝে যখন বুঝেগেছ সে কোন এলাকার তখন শুরু করে সেই আন্চিলক ভাষায় কথা বলা। তদের আচরন দেখে মনে হবে পরিচিত কেউ একজনের সাথে কথা হচ্ছে এত আন্তরিক।হয়ত সেই সহজ সরল বিদেশ ফেরত লোকটিযদি তার কথায় মুগ্দ হয়ে তার কাছ থেকে একটা গািড় স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামি নিয়ে  নিবে আর সে পেয়ে যাচ্ছে একটা বিশেষ অঙ্কের কমিশন। যার কাছ কাছ থেকে যেমন পারছে নিয়ে নিচ্ছে।সহজ সরল মানুষগুলো প্রিয়জনের সাথে দেখা হবার আনন্দে দিয়ে দিচছে অনেক কষ্টে উপার্জনের টাকা।এই গ্রুপের লোকজনের নেটয়োযার্ক পুরু এয়ারপোর্ট এর সিকিউরিটির লোকজন থেকে ক্লিনার,কুলি পর্যন্ত বিস্তৃত। তাইতো এয়ারপোর্ট এর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে এতের বিচরন।
গতলেখায় যেখানে শেষ করেছিলাম তার পর থেকে বলি। যারা আগের লেখাগুলো পরেননি তারা বিসাক এর গত নিউজলেটার থেকে পরতে পারেন।
স্বপ্ন ও বাস্তবতা পর্ব ১ : http://bsaagweb.de/newsletter_april2013/
স্বপ্ন ও বাস্তবতা পর্ব ২ :http://bsaagweb.de/newsletter_may2013/
স্বপ্ন ও বাস্তবতা পর্ব ৩ :http://bsaagweb.de/newsletter_june2013/
যাইহোক দীর্ঘ সময়ধরে রিসিপসন এরিয়াতে বসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে জীবজন্তুর দৌড়যাপ আর রিসিপসন এরিয়াতে মানুষের আনাগোনা দেখতে দেখত যখন প্রায় বিরক্তির কাছাকাছি অবস্থা রুম নাম্বার ৬ (যা কিনা ২য় আরেকটা রিসিপসন এরিয়া পার হয়ে যেতে হয়) এ মিস্টার সুমন এর পরামর্শ নেয়ার সুবর্নসুযোগ এল ।শুরুতেই প্রাথমিক পরিচয় শেষে কি করছি এই প্রশ্নের জবাবদিয়ে মোটামুটি নিজের অবস্থানটা তার কাছে ক্লিয়ার করলাম।  আর সে ও কোন এঙ্গেলে কথা বলবে তা ঠিক করে নিল। কোন দেশে যতে চাই ২য় প্রশ্নের উওর যা কিনা আমার মোটামুটি মুখস্ত হয়ে গেছে কারন আমাদের আলাপচারিতার সময় তার মোবাইলে যতগুলো কল এসেছে সবগুলোতেই সে একই কথা বলেছে এবং যতবার আমি ভিসা অফিসে গিয়েছি তার মুখে এই কথা শুনেছি জার্মান যেতে হলে কি করতে হবে এই প্রশ্নের জবাব। কথাগুলো এরকম “  জার্মান ইউনিভার্সিটিতে পরাশোনা করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না কিন্তু জার্মান ভাসা মেন্ডেটরি।  তাই ইউনিভার্সিটি অনুমোদিত কোন ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট থেকে ৬-৯ মাসের কোর্স করতে হবে। আর কোন স্পন্সর লাগবে না কিন্তু নিজের একাউন্ট এ ৭৯০৮ ইউরো দেখাতে হবে যা কিনা ভিসা হবার পর উঠিয়ে ফেলা যাবে । “ এইটুকু বলে সে থামল। কত টাকা খরচ হবে প্রশ্নর উওর শুরু করার আগে সে একটা টুকরা কাগজ নিয়ে লেখা ও বর্ননা শুরু করল “৩১৩৫ টাকা দিয়ে ভিসা ওয়া অফিস এ স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করতে হবে। সকল একাডেমিক কাগজপএ এর ফটোকপিএক কপি ছবি জমাদিতে হবে তার সাথে। তার পর তারা এগুলো জার্মানিতে পাঠাবে প্রাথমিক মূল্যায়ন এর জন্য। প্রাথমিক মূল্যায়নে টিকলে তার পর ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এনরুলমেন্ট ফি ২০০ ইউরো,  ইউনি এনরুলমেন্ট ফি ২০০ ইউরো , ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ফি এর অর্ধেক ২২০০ ইউরো,  ব্যাংক ট্রান্সফার ফি ৩০০০টাকা, আর ডিএইচএল এ পেপারস পাঠানোর খরচ বাবদ মোট ২লাখ ৮০ হাজার টাকা শুরুতে ওদেরকে দিতে হবে। তার পর জার্মানি থেকে ল্যাঙ্গুয়েজ ও ইউনি অফার লেটার পর ভিসা ইন্টারভিও খরচ ৬০ ইউরো, ভিসা পেলে এদের কন্সালটেন্সি ফি ১৭ হাজার টাকা,  প্লেন ফেয়ার ৬০হাজার টাকা এর মত আর হ্যান্ডক্যাশ সহ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হবে।  এটা মুখস্ত কথা। সবাইকে এই একই কথা বলে।বাকি ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ফি,  ১২ সপ্তাহ বা ৩ মাসের বাসা ভাড়া বাবদ ১০৫০ ইউরো,  েয়ারপোর্ট পিকআপ বাবদ ১৩০ ইউরো ও বই বাবদ ১২০ ইউরো এর হিসাব বা কি হবে তা কিন্তু শুরুতে বলে না।  কিন্তু ভিসা হবার পর আসলে ব্যাপারটা সম্পূর্ন ঘুরে যায় এবং  যা
ঘটে তা আপনারা পর্যায় ক্রমে সামনের লেখায় পাবেন। চিন্তা ও করতে পারবেন না কি ঘটে । যাই হোক এই হচ্ছে সারমর্ম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার সাথে যে ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়া যাবার জন্য গিয়েছিল তার খরচের প্রাথমিক হিসার টা ও প্রায় একই রকম শুরুতে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে ভিসা হবার পর সব মিলিয়ে প্রায় ৪ থেক সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হবে। ইতি মধ্যে আমাদের জন্য কফি চলে এসছে। এবার ইনফর্মাল কথা শুরু আমার ব্যাকগ্রাউন্ড হোটেল রিলেটেড জব একপিরিয়েন্ট ও আছে। আমি ইউকে বা আয়ারল্যান্ড এ ট্রাই করছি না কেন? এবার তার নতুন অফার আমার জন্য স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করে জার্মানি এর জন্য ট্রাই করব পাশাপাশি আমি আইএলটিএস দিয়ে আয়ারল্যান্ড এর জন্য ট্রাই করব। জার্মিনিতে না হলে আয়ারল্যান্ডে ও হবে। সাথে সাথে সামনে রাখা পেপার কাটিং এ ইতিমধ্যে যারা জার্মানির ভিসা পেয়েছে তা এগিয়ে দিয়ে বলল এরা পেয়েছে আপনি ও পাবেন। হয়ত এখন আমাদের ছবি সম্বলিত পেপার কাটিং নতুনদের সামনে এগিয়ে দেয়।  শুনেছি আমাদের ছবি দিয়ে বিশাল ব্যানার বানিয়ে ভিসা ওয়াল্ড এর অফিসে টানিয়েছে।  সেদিন নতুন এক স্টুডেন্ট এসে এ কথা জানালো। ও  প্রসেস শেষ হতে ৪ থ সাড়ে ৪ মাস এর মত সময় লাগবে। সো এইমাসের শেষ সপ্তাহের আগেই ফাইল ওপেন করে ফেলেন। তা হলে জানুয়ারি সেশন ধরা যাবে।
কাজের সুযোগ কেমন? সপ্তাহে ২০ ঘন্টা আর ছুটির দিনে ফুরটাইম কাজ করতে পারবেন। ম্যাগডোনাল্ট, কেএফসি, রেস্টুরেন্ট গুলোতে কাজ করে খরচ চালানোর পরও ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মানে৫০০ থেকে ৮০০ ইউরো হাতে থাকবে। । অথচ বাস্তবতা কি? ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্টদের কাজের পারমিশনই নেই। আর এখানে স্টুডেন্ট বা মিনিজব ফিক্রট ৪৫০ইউরো। যাই হোক এই হচ্ছে ভিসা অফিসের শুরুর দিনের অভিঙ্গতা। আগামী লেখায় বিএসবি নিয়ে
 লিখব। সবাই ভাল থাকবেন।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন