সম্প্রতি জার্মান এমব্যাসি নতুন একটি নিয়ম করার জার্মানিতে আসার প্রত্যাশিত স্টুডেন্টদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছ। বেশ কিছুদিন ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে। যেখানে আমরা জার্মানিতে থেকেও বাসা ম্যানেজ করতে হিমসিম খেয়ে যাই সেখানে বাংলাদেশ থেকে বাসা ঠিক করে আসাটা সত্যিই কষ্টের কাজ। যেহেতু আমি এজেন্সি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা লিখছি তাই বাসা নিয়ে আমার অভিঙ্গতার বর্ণনা অনেক পরে আসবে। কিন্তু যেহেতু এ বিষয়টি টক অফ দা টাইম হয়ে গেছে। আর এজেন্সিগুলো ও তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার আরও একটা নতুন কৌশল পেয়ে গেছে ।তাই যারা ভাবছেন এজেন্সিতে গিয়ে এ সমস্যার সমাধান নেবেন তাদের জন্য এ লেখাটা পড়ে সিদ্ধান্ত নেবার অনুরোধ রইল।
আমার ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এর প্যাকেজে হেলথ ইনস্যুরেন্স, এয়ারপোর্ট পিক-আপ সাথে ১২ সপ্তাহ মানে ৩ মাসের একোমোডেশন ছিল তাও আবার জার্মান ফ্যামিলির সাথে থাকার কথা এজেন্সি থেকে বলে দিয়েছিল। তাই বাসা নিয়ে কোন টেনশন ছিল না জার্মানিতে আসার আগে। আর ৩ মাস পর কি করব এজেন্সির কাউন্সিলর বলেছিল যেহেতু আমরা ৪ জন একসাথে একই ব্যাচে, তাই আমরা একসাথে বাসা পরবর্তীতে ঠিক করে নিতে পারব। বাস্তবতা যে কি তা ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেও এমনকি গাড়ি থেকে নেমে Blackforest Hostel এর গেট দিয়ে ঢুকার সময় ও ভাবিনি। যাই হোক শুরু থেকে বলি।
ভিসা পাবার ১৮ দিন পর আমার ক্লাস শুরু হবে, তাই ক্লাস শুরুর আগের দিন ফ্লাই করার টিকেট কাটি। এর ভিতরে নিজের অফিস থেকে শর্ট নোটিশে ক্লিয়ারেন্স পেলেও “ভিসা ওয়ার্ল্ড”[দালাল/এজেন্সি] অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স পেতে যে বেগ পেতে হয় তা ধারাবাহিক বর্ণনায় বলব। ফ্লাই করার ৪/৫ ঘণ্টা আগে রাত ৯টার দিকে আমার বাসা,এয়ারপোর্ট পিক-আপ আর ল্যাংগুয়েজ স্কুলের মানি রিসিপ্ট এর মেইল পাই। যাতে Blackforest Hostel এর ঠিকানা আর একটা ছবি ছিল। জার্মানিতে এসে হোস্টেলের গেট দিয়ে ঢুকার সময় ভাবতেছিলাম আমাদের দেশের হোস্টেল গুলোর মত কিছু একটা হবে হয়ত।
কিন্তু ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম, সামনে বিশাল এক হল রুম, আর হলের ডানপাশে রিসিপসন এর মত একটা জায়গা দেখে সেখানে থাকা একজনকে আমার পরিচয় দিয়ে আমার রুমের কথা জানতে চাইলে প্রথমে সে বুঝতে না পারলেও স্কুলের নাম বলতে এবার সে বুঝতে পারল। ও বলল, আমার জন্য রুম রাখা আছে ৩ দিনের জন্য। আমি তো আবার ৩ মাসের টাকা প্রায় ৮ মাস আগে পে করা, আর বলে কিনা ৩ দিন। তার সাথে পেঁচাল না পেড়ে আগামীকাল স্কুলে গিয়ে এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়া যাবে। ইতিমধ্যে কাঁথা বালিশ বাবদ এককালীন ৩ না ৫ ইউরো তাকে পে করি। সে একটা লকারের চাবি দিল, যার ডিপোজিট হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়ে রুমের দিকে রওনা দিলাম। ইতিমধ্যে অসংখ্য স্টুডেন্টদের আনাগোনা দেখে বুঝলাম এটা আসলে স্টুডেন্টদের জন্য প্রাইভেট হোস্টেল। আর বিশাল ১৬ বেডের রুমে গিয়ে নিজের সিট পেয়ে ব্যাপারটা আরও ক্লিয়ার হল। লম্বা জার্নি,আপনজনদের ছেড়ে আসা আর অবশেষে ১৬ বেডের রুমে ঠাই। সব মিলিয়ে পুরাপুরি সেইরকম একটা অনুভূতি।
পরের দিন স্কুলে গিয়ে কিছু বলার আগেই নতুন বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার কিভাবে যেতে হবে বিস্তারিতসহ একটা কাগজ দিয়ে দিল। নতুন বাসায় ওঠে মনটা কিছুটা ভাল হয়ে গেল। যদিও ফ্যামিলি বাসা না, বিশাল একটা এপার্টমেন্টে ৭ জন স্টুডেন্ট একসাথে থাকছে। সবার যার যার রুম কিন্তু কমন বাথ কমন কিচেন। আমাদের দেশের ম্যাসের মতই তবে অনেকটা সাজানো গোছানো ও পরিচ্ছন্ন। সবার সাথে অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল, যা এখনো আছে। কিন্তু মাস শেষে আবার অন্য বাসায় যেতে হবে শুনে মাথা গরম হয়ে গেল। স্কুলে গিয়ে দিলাম ঝাড়ি দুদিন পর পর বাসা পাল্টাও, ফাইজলামি নাকি। ১০৫০ ইউরো নগদে পে করে আসছি (যদিও এটা বলি নি), সরি বলে এটাই লাস্ট বলল এবং নতুন বাসার ডিটেল্স দু-একদিন এর মধ্যে দিবে বলে দিল। আর এও বলে দিল, কিছুদিন পরই ইউনিতে সেমিস্টার শুরু হবে, তখন বাসার খুব প্রেশার থাকে। তাই আমরা যেন এখনই বাসা খুঁজা করা শুরু করি। কোথায় খুঁজব তার একটা লিস্টও দিল। লিস্ট এর স্টুডেন্ট হোস্টেলের ওয়েভ এড্রেসে বাসা খুঁজে পাই ঠিকই কিন্তু ভাড়া কোনটারই ৩৫০/৪০০ ইউরো এর নিচে না। এক রুমে দু জন থাকব তো দুরের কথা সিঙ্গেল রুমই পাইনা।
শুরুতে ইংরেজিতে মেইল করি, এই জন্য রিপ্লাই দেয় না ভাবতাম। তারপর যখন ডয়েচে মেইল করি, তারপরও তেমন সাড়া পাই না। শুরু করলাম ফোন করা, শুরুতে বাসা দিবে বলে রাজি হলেও ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্ট বলে দিতে রাজি হয় না। আর রাজি হলেও ১০০০ থেকে ২৫০০ ইউরো পর্যন্ত সিকিউরিটি মানি চায়। এদিকে বাসা শেষের দিন প্রায় ঘনিয়ে আসছে। গেলাম একোমোডেশন এজেন্সিতে। তাদের কাছেও বাসা নেই। ফোন নাম্বার রেখে দিল বা পেলে ফোন দিবে। তাদের শর্তের কথা শুনে তো মাথায় হাত! একমাসের ভাড়ার টাকা তাদের দিয়ে দিতে হবে।
ইতিমধ্যে সব বাঙ্গালিরা একসাথে এক ফ্ল্যাটে ওঠা, আর এক রুমে দুজন থাকার প্ল্যান বাদ দিয়ে নিজের মত রুম খুঁজার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। আমি আবার বাসা চেঞ্জ করে নতুন বাসায় ওঠালাম। সবাই বিকালে বাসা খুঁজে। কিন্তু খুঁজব কোথায়? ঢাকার মত তো আর টুলেট ঝোলানো নেই। তাই ইন্টারনেট আর পত্রিকা ভরসা। এই বাসার বাড়িওয়ালার সাথে ভাল খাতির হয়ে গেছে। তার কাছে জানতে পারলাম আমি যাবার পরও এ রুমটা খালি থাকবে । আমি ইচ্ছে করলে থাকতে পারি কিন্তু তাকে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। তা না হলে সে অন্য একজনকে দিয়ে দিবে। সে আরও জানালো মাসিক ভাড়া ৩০০ ইউরো। কিন্তু আমরা তো স্কুলকে ৩৫০ ইউরো পে করেছি? তার মানে ৫০ ইউরো স্কুলের বাসা খুঁজে দেয়ার কমিশন। যাই হোক আমার তো টেনশন কমল বাকিদের ১২ সপ্তাহ শেষ হবার পর একদিনও বেশি থাকতে পারবে না, কারণ তাদের বাসা অলরেডি ভাড়া হয়ে গেছে। তাহলে উপায় স্কুলকে ৫০ ইউরো কমিশন দিয়ে নতুন বাসা নাও। এখানেও নতুন বাহানা শুরু হল এখন ৩৫০ ইউরোতে বাসা নাকি স্কুলের এরাও পাচ্ছে না , ৩৮০ না হয় ৪০০ ইউরো নিবে। এক রুমে দু জন থাকলে ৩৫০ করে ৭০০ ইউরোতে রুম হবে।
শেষমেশ, আমি আমার বাসাতেই কন্টিনিও করলাম, আর এরা স্কুলকে ৫০ ইউরো বেশি দিয়ে বাসা নিল, আর বাকি দু জন এক বাঙ্গালী ভাই এর হেল্প নিয়ে নতুন এক রুমে উঠল যেটি কিনা পুরাই বাংলাদেশি ম্যাসের মত শুনেছি। প্রতিদিন তাদের পানি কিনে নিতে হয়। আর নতুন যারা আসছে তাদের সবারই একই অবস্থা .আমি যে বাসাটিও ছিলাম সে বাসাটা ছেড়ে এসেছি কিন্তু নতুন আসা ৬ জন বাঙ্গালী থাকছে এখন ঐ বাসায় তাও এক রুমে দুজন করে ,প্রথম বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের আচরন আর ব্যবহারএর জন্য তা সম্ভব হয়েছে….এখানের এজেন্সি বা স্কুল এর কোন কিছু অবদান নেই। তারা আছে তাদের লাভের চিন্তায়। একপক্ষ দেশে আপনার কাছ থেকে ফায়দা লুটে অন্য পক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে। এবার তারা আপনার কাছ থেকে যা ফায়দা লুটতে পারে। সো আবারও বলছি সিদ্ধান্ত আপনার. …….http://bsaagweb.de/?p=4714&preview=true
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন