বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

Heritage Land Bikrampur, Munshigong (ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুর মুন্সীগঞ্জ)



লেখাটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে

রাজীব পাল রনী
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
প্রাচীন বাংলার রাজধানী বিক্রমপুর। প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের জ্ঞানপিপাসুদের জ্ঞানার্জনের তীর্থকেন্দ্র ছিল বিক্রমপুর। বর্তমানে এ অঞ্চলটি মুন্সীগঞ্জ জেলা হিসেবে পরিচিত। একসময় বিক্রমপুর নগরীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিশাল জনপদ। তাই এ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক নিদর্শন। বাংলার প্রাচীন রাজধানী বিক্রমপুরের সেই জৌলুস এখন আর নেই। কিন্তু ইতিহাস ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন এখনও প্রাচীন বিক্রমপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। শেকড়সন্ধানী যারা তারা ঐতিহ্যের লীলাভূমি বিক্রমপুরে ঘুরে আসতে পারেন।
ইদ্রাকপুর দুর্গ : মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুরে অবস্থিত ইদ্রাকপুর দুর্গ। মুঘল সুবেদার মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ইদ্রাকপুরে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা দুর্গের চেয়ে এটি আয়তনে কিছুটা ছোট। সে সময়ে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই দুর্গটি। সুড়ঙ্গ পথে ঢাকার লালবাগ দুর্গের সঙ্গে এই দুর্গের সংযোগ ছিল বলে একটি জনশ্র“তি আছে। উঁচু প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গের চারকোণে রয়েছে একটি করে গোলাকার বেষ্টনী। দুর্গের ভেতর থেকে শত্র“র প্রতি গোলা নিক্ষেপ করার জন্য চারদিকের দেয়ালের গায়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। বাংলাদেশের মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯০৯ সালে।
বাবা আদম শাহী মসজিদ : পাঁচশ বছরের ইতিহাসখ্যাত বাবা আদম মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে মিরকাদিম পৌরসভার দরগা বাড়ির এলাকায় অবস্থিত। হিজরী ৮৮৮ অনুযায়ী ১৪৮৩ সালে মসজিদটি তৈরি করা হয়। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে বাবা আদমের মসজিদটি আমাদের দেশের প্রথম মসজিদ। ছয় গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট, প্রস্থ ৩৬ ফুট। স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী ইমারতটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ মসজিদের ছবি সংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ : অতীশ দীপঙ্কর ছিলেন উপমহাদেশের সবচেয়ে জ্ঞানী বৌদ্ধ পণ্ডিত। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্র যোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য বজ্র যোগিনী গ্রামে স্থাপিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ২০০৪ সালে চীনের আর্থিক সহযোগিতায় তিব্বতীয় মডেল অনুকরণে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাল্যকালে তার নাম ছিল চন্দ্রগর্ভ। পরে তিনি শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর নামে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম বিকাশের জন্য বাঙালি দীপঙ্কর প্রায় ১২ বছর তিব্বতে বাস করে তিব্বতের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতা ও ধর্মতত্ত্ব জনগণের মধ্যে প্রচার করেন। জেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটারের পথ অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ।
বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর : মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ী খাল গ্রামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর রয়েছে। জগদীশ চন্দ্র বসু শ্রীনগরের রাঢ়ী খাল গ্রামে ১৮৫৮ সালে ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর নামে ১৯৯৪ সালে তার দুশ বছরের পুরনো বসত বাড়িটির একটি কক্ষ সংস্কার করে বিজ্ঞানীর স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে জগদীশ চন্দ্র বসু ফাউন্ডেশন। জাদুঘরের সামনে রয়েছে বিজ্ঞানীর আবক্ষ মূর্তি এছাড়া জাদুঘরে রয়েছে বিজ্ঞানী ও তার পরিবারের সদস্যদের পোর্ট্রেট। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি, কবির লেখার ফটোকপি এবং হাতে আঁকা ছবি। তাকে নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকানন্দ, আইনস্টাইন, জর্জ বার্নাড শসহ মনীষীদের লেখা পাণ্ডুলিপি। এছাড়াও বরেণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তার তোলা ছবি।
শ্যামসিদ্ধির মঠ : শ্রীনগর উপজেলা থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে শ্রীনগর গাদীঘাট সড়কের পাশে শ্যামসিদ্ধি নামক গ্রামে অবস্থিত। ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুনাথ মজুমদার সুবিশাল মঠ নির্মাণ করেন। সুবিশাল এ মঠের উচ্চতা ২৪২ ফুট। মঠের ভিত্তি ও প্রস্থের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট।
পদ্মা রিসোর্ট : মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার নদীর অপর পাড়ে মসজিদের পাশে দাঁড়ালেই পাবেন মনোমুগ্ধকর পদ্মা রিসোর্ট। নদীর মাঝে বিশাল বিস্তৃত চর। প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে চরটি দীর্ঘকাল পদ্মার বুকজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মা রিসোর্টের সামনে আছে ঘন ঘাস ও বালুর প্রান্তর। রিসোর্টে থাকার জন্য আছে ১৮টি কটেজ। এ কটেজগুলো বাংলার বারো মাস ও ছয় ঋতুর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ কটেজের চাল সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি। রিসোর্টের দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তালগাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।
সোনারং জোড়া মঠ : সোনারং জোড়া মঠ বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রতœতত্ত্ব নিদর্শন। ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র জোড়া মঠ। মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে এটি অবস্থিত। জোড়া মঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত এটি জোড়া মন্দির।
কিভাবে যাবেন : রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটারের পথ মুন্সীগঞ্জ জেলা। স্থল ও নৌপথে মুন্সীগঞ্জ যাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট, নয়ন পরিবহন, ডিটিএল, ঝিলিক পরিবহন, দীঘিরপাড় ট্রান্সপোর্টে মুন্সীগঞ্জ যাওয়া যায়। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সদরঘাট থেকেও মুন্সীগঞ্জে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া চাঁদপুরগামী লঞ্চ মুন্সীগঞ্জ থামে। সদরঘাট থেকে ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
- See more at: http://www.jugantor.com/out-of-home/2013/09/10/27268#sthash.PK2ExOm5.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন