সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

এলসি খুলবেন কিভাবে?

ব্যবসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে পণ্য আনার জন্য করতে হয় 'এলসি'। বিষয়টি অনেকের কাছেই জটিল মনে হয়। আসলে তা নয়। জানাচ্ছেন কিঙ্কর আহ্সান
এলসি করতে কম্পানির ট্রেড লাইসেন্স, টিন নম্বর লাগে। কম্পানির নামে খুলতে হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ব্যাংক থেকে এলসির ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দিতে হবে। কোন পণ্য আনা হবে, দাম কত, কোন দেশ থেকে আসবে- দিতে হবে এসব তথ্য। ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, 'এলসি করার জন্য যেসব পণ্য আনা হবে তার তালিকা (ইনডেন্ট) করতে হবে প্রথমে। দেশটির বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছ থেকে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে আনতে হবে ডকুমেন্ট। যদি সে দেশে প্রতিনিধি না থাকে, তবে কম্পানিতে মেইল করে দাম ঠিক করে ডকুমেন্ট আনাতে হবে। এতে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, পণ্যের মূল্য, পোর্ট অব শিপমেন্ট- এসব তথ্য থাকে।'
প্রয়োজন দরকারি সব তথ্য
শুরুতে ব্যাংক থেকে এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) আবেদন ফরম সংগ্রহ করে ইনডেন্ট অনুযায়ী পূরণ করে জমা দিতে হবে। ফরমের সঙ্গে লাগবে আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন), ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি), ইনডেন্ট, কম্পানির ব্যাংক ক্রেডিট রিপোর্ট, ইনস্যুরেন্সের কাগজপত্র। টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংক এলসির একটা কপি দেবে এবং আসলটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে বিদেশি সরবরাহকারীর কাছে।

আইআরসি করতে
আইআরসির জন্য মতিঝিলের এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট বিভাগের প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে ফরম নিতে হয়। এ সময় জমা দিতে হয় কম্পানির ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও নির্ধারিত ফি।

নিরাপত্তা দেবে এলসি
অর্থের নিরাপত্তার জন্য চালু আছে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ১ শতাংশ টাকা কেটে পিএসআই কম্পানিকে দেয়। এ ক্ষেত্রে শিপমেন্ট হবে পণ্য পরীক্ষা করে সনদ দেওয়ার পর। নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করা হলে সরবরাহকারীর লোকাল এজেন্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে হবে। সার্ভেয়ার পণ্য পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে। রিপোর্টে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহকারীর কাছ থেকে টাকা ফেরত আনার আবেদন করলে হতে পারে সমস্যার সমাধান




এলসি করবেন কি ভাবে : অনেকে প্রশ্নটি করছেন এখানে। অন্য সবারো যাতে উপকার হয় তাই বিস্তারিত পোষ্ট দিলাম।

এলসি করতে হলে সবার আগে আপনার কোম্পানীর টিন ভ্যাট করাতে হবে। এরপর ব্যংকে গিয়ে কোম্পানীর নামে একাউন্ড খুলতে হবে। তারপর ব্যাংক থেক এলসিএ ফর্ম কালেক্ট করে ফিলাপ করে ব্যাংক এ জমা দিতে হবে। এখানে কিছু ইনফো লাগবে (যেমন : কি পন্য, দাম কত, কোন দেশ থেকে আসবে এসব)। আমি নীচে ধারাবাহিকভাবে দিচ্ছি আরো বিস্তারিত :

পর্যায় ১ : কোম্পানীর ট্রেড লাইসেন্স,টিন, ভ্যাট করা। আইআর সি (ইমপোর্ট রেজি: সির্টিফিকেট) করা।
-পর্যায় ২ : কোন ব্যাংক এ কোম্পানীর একাউন্ট করা।

-পর্যায় ৩ : যে পন্য আনবেন তার ইনডেন্ট কালেক্ট করা (ধরা যাক আপনি ১৫ টন নিউজপ্রিন্ট কাগজ আনবেন কোরিয়া থেকে। এখন যে কোম্পানী থেকে আনবেন সে কোম্পানীর বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছে গিয়ে দাম দর ঠিক করে একটা ডকুমেন্ট নেবেন। এটাই ইনডেন্ট। আর সে কোম্পানীর যদি বাংলাদেশ প্রতিনিধি না থাকে তাহলে সে কোম্পানীতে সরাসরি মেইল করে দাম ঠিক করে ডকুমেন্ট আনাতে হবে। তখন এটাকে বলা হয় পি আই বা প্রফরমা ইনভয়েস। এতে পণ্যের বিস্তারিত, দাম, পোর্ট অব শিপমেন্ট এসব তত্রাদি থাকে।)

-পর্যায় ৪ : ব্যাংক থেকে এলসিএ (লেটার অব ক্রেডিট এপ্লিকেশন) ফর্ম কালেক্ট করে ইনডেন্ট/পিআই অনুযায়ী তা পূরন করে ব্যাংক এ জমা দেয়া।

পর্যায় ৫ : এলসি মার্জিন জমা দেয়া । প্রথম দিকে ব্যাংক এ পুরো টাকাটাই জমা দিতে হবে। ধরা যাক এলসি ভ্যলু ২০,০০০ ডলার। ব্যাংক এ আপনাকে ১৬ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। তবে আস্তে আস্তে ব্যাংকের সাথে ব্যবসা বাড়লে তখন ১০-২০% মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হবে। টাকার সাথে অন্যান্য কিছু ডকুমেন্টও দিতে হবে। যেমন :

- আপনার কোম্পানীর সব কাগজ (ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ভ্রাট, আইআরসি)
- ইনডেন্ট/পিআই এর ৩/৪ টি কপি।
- সাপ্লায়ার কোম্পানীর ব্যাংক ক্রেডিট রিপোর্ট
- ইন্সুরেন্স কভার নোট (যে কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ইনডেন্ট দেখিয়ে ফি দিয়ে এটা নিত হবে)

ব্যাস হয়ে গেলো। এরপর ব্যাংক আপনাকে এলসির একটা কপি দেবে। অরিজিনালটা পাঠিয়ে দেবে বিদেশে সাপ্লাইয়ারের কাছে। কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে করতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন