বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

J দুই দিনে তিন ঝরনা

লেখাটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে 
বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য আরও বাড়ে, বৃষ্টির পানি পেয়ে আরও সবুজ হয় তার গাছপালা। আর পাহাড় বেয়ে নেমে আসার ঝরনাগুলোও মেলে ধরে তাদের পূর্ণ রূপ। এত দিন হয়তো তা ছিল শুকনো, পায়ে চলা পথের মতো, কিংবা কুলকুল বয়ে চলা সরু ধারা বর্ষায় তারই রূপ দেখে কে! বৃষ্টির সময় পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়াটা সব সময়ই উপভোগ্য। তাই এবার বেরিয়ে পড়লাম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে। দেখতে যাব সহস্রধারা ঝরনা। সীতাকুণ্ডের দুই কিলোমিটার আগেই নেমে পড়তে হলো। Untitled-24এই ঝরনা সবাই চেনেন না। পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় নেই-ই, গাইডও তাই পাওয়া যায় না। স্থানীয় লোকজনের মুখের কথাই পথের নির্দেশ দেয় আমাদের। সারা দিনই ঝরছে টিপটিপ বৃষ্টি। এর মধ্যে কাঁচা রাস্তা ভেঙে পৌঁছালাম প্রোজেক্ট। সেখানে দেখি টিলার ওপর স্লুইসগেট। আগে নাকি এটি বন্ধ ছিল, তখন পাহাড়ের ওপর এক হ্রদ ছিল। এখন ঝরনা থেকে নেমে আসা একটা ঝিরিপথ চলে গেছে সেদিকে। যেন সবুজ ভেলভেট বিছানো সেই ঝিরিপথ ধরেই হাঁটা শুরু হলো আমাদের। কিছুক্ষণ পর ঝরনার দেখা পেলাম। সেদিন আমাদের ভাগ্য ভালোই। বৃষ্টিতে আরও বেড়েছে সহস্রধারার পানি। গর্জন শোনা যায় সেখানে। ডালপালার ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ে তার তেজ। সকালে এক ঝরনা দেখে বিকেলে আরেকটা দেখার পালা। এটি সীতাকুণ্ড শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ইকোপার্ক। পার্কের প্রবেশমুখে নেমে দুই কিলোমিটার পথ সিএনজি চালিত অটোরিকশা দিয়ে যেতে হয়। এর সার্থক নাম সুপ্তধারা। প্রবেশমুখে লেখা আছে, ‘ঘুমিয়ে থাকি, জেগে উঠি বর্ষায়’। পাহাড়ের একদম শেষে এর অবস্থান। পুরো পথটাই সিঁড়ি বাঁধানো। তবে উঠতে হবে না, নামতে হবে। গুনে দেখিনি, মনে হলো অন্তত ৫০০ ধাপ তো হবেই। তবে ক্লান্তি টেরই পাইনি। চিকন চিকন গাছপালার ফাঁক দিয়ে নরম আলোয় নেমে যাওয়া, বৃষ্টিধোয়া পাতার ঘ্রাণও পাচ্ছিলাম যেন। একটাই সমস্যা জোঁক—একবার ধরলে বেড়ানোর মজা অনেকটাই মাটি। অনেকে সুপ্তধারা ঝরনাকেই সহস্রধারা ভাবেন। তবে দুটো একদমই আলাদা। এই ঝরনার পানির ধারা মূলত চারটি। ছোট আরও কিছু ধারা চোখে পড়ে। ধবধবে সাদা পানির ফেনা তুলে নামছে নিচে।
সারা দিনে দুটি ঝরনার পানিতে মনভরে গোসল করেছি। দুটোই আমাদের ক্লান্তি ধুয়ে-মুছে তরতাজা করে দিয়েছে। পরদিন তাই নতুন আর একটা ঝরনার উদ্দেশে যাত্রায় উদ্যমের অভাব হয়নি কোনো।
Untitled-25এবার খইয়াছড়া ঝরনা। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় গন্তব্য মিরেরসরাই বড় দরগায়। এরপর পা-ই ভরসা। গ্রামের কাঁচা পথে প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পর পেলাম খইয়াছড়ার দেখা। তবে এখান থেকে এর রূপের সামান্যই চোখে পড়ে। এই ঝরনার আট স্তর। নিচে থেকে আমরা দেখেছি মাত্র তিন স্তর। তবে কি বাকিগুলো দেখা হবে না! এত দূরে এসে তো ফেরা যাবে না। আমরা নামলাম টারজানের ভূমিকায়। গাছের শিকড় আর দড়ি ধরে ঝরনার পাশের খাড়া পথ বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। চারদিকে ঘন সবুজ, নিচে চোখে পড়ছে ঝরনার ধারা। প্রায় আধা ঘণ্টায় একটু উঠলাম। বৃষ্টিতে পথ পিচ্ছিল। মাঝেমধ্যেই পা ফসকাচ্ছে। আর সাহস করলাম না। ফিরলাম নিচের দিকে। পরে আসার জন্য এটুকু বাকি থাক।

জেনে নিন
এই ভ্রমণের সুবিধা হলো দুই হাজার টাকারও কমে ঘুরে আসা যায় এই তিন ঝরনা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে চড়ে সীতাকুণ্ডে নেমে পড়ুন। এখানে ভালো হোটেল বলতে হোটেল সায়মন। ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। চট্টগ্রামে থাকলে অনেক ভালো হোটেল পাবেন। এ ছাড়া ঝরনায় যাওয়ার পথে শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে নিন। কারণ, গ্রামের পথে দোকানপাট পাবেন খুবই কম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন